কান্তজীউ মন্দির (Kantajew/Kantaji Temple)

 

কান্তজীউ মন্দির (Kantajew/Kantaji Temple)

অবস্থান

মন্দিরটি অবস্থিত কান্তনগর (Kantanagar), দিনাজপুর জেলা, রংপুর বিভাগের বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলে। 

দিনাজপুর শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি উত্তর দিকে, ঢেঁপা নদী–এর পাড়ে। 


ইতিহাস

মন্দিরটি শুরু করা হয় ১৭০৪ খ্রিস্টাব্দের দিকে মহারাজা প্রণনাথ (Maharaja Prannath) কর্তৃক। 

পরবর্তী সময়ে তাঁর দত্তক ছেলে রাজা রামনাথ (Raja Ramnath) দ্বারা মন্দিরটি সমাপ্ত হয় — প্রায় ১৭৫২ খ্রিস্টাব্দে। 

মূলত এটি একটি হিন্দু উপাসনালয়, উৎসর্গ করা হয়েছে কৃষ্ণ (Krishna) ও তাঁর স্ত্রী রুকমিণী (Rukmini)-কে। 

মন্দিরটি একসময় নব-রত্ন (নউ রাত্ন) শৈলীতে ছিল — অর্থাৎ মোট ৯টি সিংহাসন বা শৃঙ্গ ছিল যা আরও উঁচু দেখাত। কিন্তু ১৮৯৭ সালের বৃহৎ ভূকম্পনে সেগুলি ধ্বংস হয়। 


স্থাপত্য ও শিল্পকর্ম

মন্দিরটি বর্গাকার ভিত্তিতে তৈরি; বহির্ভাগে ও অভ্যন্তরে দেয়ালে প্রায় ১৫ হাজার পর্যায়ের টেরাকোটা প্যানেল রয়েছে — যা বিভিন্ন পুরাকাহিনী, সামাজিক দৃশ্যাবলী, পশুপাখি-প্রকৃতি ইত্যাদি চিত্রায়িত। 

টেরাকোটার শিল্পকর্মে দেখা যায় রামায়ণ, মহাভারত, কৃষ্ণ-রাধার লীলাসহ ১৮শ শতকের বাংলার সামাজিক-সাংস্কৃতিক জীবনচিত্র। 

স্থাপত্যশৈলীতে রয়েছে বহুল প্রশস্ত বহু-কুস্পট বেড়াজাল, অর্ধগোল গুচ্ছাকার আয়নায় মিহিরাব প্রভৃতি মুসলিম ও বাঙালি স্থাপত্য উপাদানের মেলবন্ধন। 


ধর্মীয় ও সাংস্কৃতিক গুরুত্ব

কৃষ্ণ ও রুকমিণী-ভক্তদের জন্য এটি এক মুখ্য উপাসনাস্থান। 

মন্দিরের প্রাঙ্গণে বিভিন্ন উৎসব হয়, যেমন রস্ মেলা (Ras Mela) ইত্যাদি, যেখানে বহু ভক্ত ও দর্শক একত্রিত হন। 


পরিদর্শন ও ভ্রমণ তথ্য

ঢাকা থেকে দিনাজপুর পৌঁছালে, দিনাজপুর শহর থেকে মন্দির পর্যন্ত ট্রান্সপোর্ট সহজ। মন্দির এলাকায় গাড়ি বা সিএনজি শেষ অংশে যেতে হয়। 

ভ্রমণের সর্বোত্তম সময়: অক্টোবর থেকে মার্চের মধ্যে, আবহাওয়া শীতল ও অনুকূল। 

মন্দিরটি হিন্দু উপাসনালয় হওয়ায় আদর্শ পোশাক এবং সাধারণ ভ্রমণ নীতি মানা উত্তম।


সংরক্ষণ ও অবস্থা

মন্দিরের নব-রত্ন শৃঙ্গ ধ্বংস হওয়ায় এখন মূল শৃঙ্গ নেই। কিন্তু স্তরভিত্তিক মূল কাঠামো রয়ে গেছে। 

বাংলাদেশের সরকারের দ্বারা এটি সংরক্ষিত স্মৃতিসৌধ (protected monument) হিসেবে বিবেচিত। 

Comments

Popular posts from this blog

কিভাবে অনলাইন থেকে টাকা ইনকাম করা যায়

🐿️ টুনটুন কাঠবিড়ালির বাদামের বাগান

🕯️ আলো খাওয়া পোকা